বুধবার, জানুয়ারী ২২, ২০২৫ ||

মুক্তদিন

প্রকাশ:

বুধবার, জানুয়ারী ১৫, ২০২৫ || ১২:১৮ PM

দেখা হয়েছে 126

জয়ন্ত কুমার পণ্ডিত

হোম / নাগরিক সংবাদ

কনকনে শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে কেন ঘুমায় তারা

প্রকাশ:

বুধবার, জানুয়ারী ১৫, ২০২৫ || ১২:১৮ PM

126

জয়ন্ত কুমার পণ্ডিত

কনকনে শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে  কেন ঘুমায় তারা

ছবি, লেখক

সন্ধ্যার পর কোন কাজ ছাড়াই স্কুলের মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। আলো জ্বলছে দেখে ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে গিয়ে কিছুটা অবাক হই। দেখি স্কুলের একটি পরিত্যক্ত ভবনের বারান্দায় সারি সারি মশারি টানানো।কৌতুহল নিয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখি পুরো বারান্দাজুড়েই টানানো রয়েছে মশারি। কোথাও মশারির ভেতরে দুই থেকে তিনজন করে শুয়ে আছে। সবাই পুরুষ। আবার কোথায় মশারির বাইরে বসে বিড়ি টানতে টানতে আড্ডায় মেতে রয়েছে পুরুষেরা।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল সদরের নজরুল একামেডী মাঠে গতকাল ১৪ জানুয়ারি রাতের ঘটনা এটি।কৌতুহল দমাতে না পেরে চারজনের একটি আড্ডায় গিয়ে জানতে চাই ‘ আপনারা এভাবে স্কুলের মাঠে ঘুমাচ্ছেন কেন, কি কাজে এখানে এসেছেন।

আড্ডারত চারজনের একজন জানান, তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায়। কারও বাড়ি পাশের নেত্রকোনা জেলায়। সবাই বোরো ধাৎনের চারা রোপনের কাজ করতে ত্রিশালে এসেছেন।সারাদিন বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ করেন। রাতে কোথাও ঘুমানোর জায়গা না পেয়ে স্কুলের পরিত্যাক্ত ভবনের রারান্দায় ঘুমান। সকাল হলে আবারও কাজে। যতদিন কাজ থাকে, তত দিনই তারা ত্রিশালে থাকবেন।

আমি খুব অবাক হই। এমন কনকনে শীতের রাতে খোলা জায়গায় মানুষ ঘুমায় কিভাবে।খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলাম বেশির ভাগ মশারির নিচেই লেপ বা ভারি কম্বল নেই। পাতলা ধরণের কম্বল আর কাঁথা গায়ে জড়িয়ে তারা ‍ঘুমাচ্ছেন। একটু কৌতুহলী হয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা জানতে চান, আমি কোন এনজিও কর্মী বা সরকারি চাকরি করি কিনা, তাদের জন্য কোন সাহায্য করতে এসেছি কি না। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে জানাই ‘না’।

এরই ফাঁকে কথা হয়, ফুলপুর উপজেলার বাসিন্দা সেলিম মিয়া (৫০), তারাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা কালাম মিয়াসহ (৪৫) আরাও কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, মূলত কাজের সন্ধানেই তারা ত্রিশালে এসেছেন।সারাদিন বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ করেন। রাতে ত্রিশাল উপজেলা সদরের নজরুল একামেডী স্কুলের মাঠে ও পরিত্যাক্ত বারান্দায় ঘুমান। সকালে আবারও কাজে যান। বাথরুম ও গোসলের কাজ কোথায় সারেন জানতে চাইলে লজ্জায় হেসে ফেলেন তারা।দিনের বেলায় যার জমিতে কাজ করেন তার বাড়ি থেকে আনা খাবার খান। আর রাতে খাবার হোটেলে খান।

সকালে গৃহস্থরা তাদের সঙ্গে সারা দিনের চুক্তি করে কাজে নিয়ে যান। প্রতিদিন ৭০০ টাকা মুজুরি ধরা হয়।এমন শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে কষ্ট হয় কি না, জানতে চাইলে একজন বলেন, কষ্ট তো হই। শীতের কারনে একটু পরপর ঘুম ভাঙে। কিন্তু সংসার চালানোর জন্য কাজ করতে হবে। শীতের ভয় পেয়ে কোন লাভ নেই। কিন্তু এতে খুব মন খারাপ হয় না তাদের।