সোমবার, অক্টোবর ২০, ২০২৫ ||

মুক্তদিন
হোম / খবর

দরিদ্র বাবাকে নিয়ে ঘুরছেন আদালতে

ছাত্রলীগের দুই নেতার খপ্পরে পরে সাইবার নিরাপত্তা আইনে ফেঁসে যান কলেজ ছাত্র

প্রকাশ:

শুক্রবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৫ || ১১:২১

377

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক

ছাত্রলীগের দুই নেতার খপ্পরে পরে সাইবার নিরাপত্তা আইনে ফেঁসে যান কলেজ ছাত্র

কলেজ ছাত্র রমজান আলী। ছবি মুক্তদিন
পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৎকালীন দুই নেতার খপ্পড়ে পড়েন সদ্য এসএসসি পাস করা এক শিক্ষার্থী। দশ হাজার টাকার হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া এক কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে পাঠনো হয় কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য

 কলেজে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট হ্যাক করার অভিযোগ উঠে। খবর পেয়ে উপজেলার প্রশাসনের কর্মকর্তারা দ্রুত কলেজে যান। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

 ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের সেই ঘটনায় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য ওই শিক্ষার্থী আদালতের বারান্দায় ঘুরছে। প্রতি তারিখে মামলার খরচাপাতির যোগান দিতে গিয়ে ভ্যান চালক বাবার কষ্ট হচ্ছে

ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. রমজান আলী (১৯) তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার চণ্ডীপাশা মহল্লার বাসিন্দা মো. গোলাপ মিয়ার ছেলে। গোলাপ মিয়া ভ্যান গাড়ি চালিয়ে তার আয় থেকে পরিবার চালানোর পাশপাশি ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছেন

 গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে বাবা ছেলের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। রমজান আলী জানান, ২০২৩ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। মনে মনে স্থির করেছিলেন নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজে ভর্তি হবেন। কলেজকে প্রাধান্য দিয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। নির্দিষ্ট সময় পর ভর্তির ফলাফল প্রকাশ হলে তিনি জানতে পারেন পছন্দের কলেজ আসেনি। তিনি কিশোরগঞ্জের একটি কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। তবে পছন্দের বাইরে অন্যকোনো কলেজে ভর্তি হননি। এভাবে হতাশায় দিন কাটতে থাকে রমজান আলীর

  সময় নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের দুই নেতাত্রাতা’ হিসেবে হাজির হন। তারা রমজানকে পছন্দের কলেজে ভর্তি করার আশ্বাস দিয়ে তাঁর বাবার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। ওই দুই নেতা হচ্ছেন কলেজ কালীন ছাত্রলীগ সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফুল আলম

ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ট্রেড (বিএমটি) বিষয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। যারা ভর্তির আবেদন করে নিশ্চয়ন করেছিলেন কেবল সেসব শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান। এদিকে রমজান ছাত্রলীগ নেতাদের কাছ থেকে ভর্তি নিশ্চয়নের একটি কাগজ পেয়ে সেটি নিয়ে কলেজে যান ভর্তি হওয়ার জন্য। কিন্তু কলেজে সংরক্ষিত তালিকায় রমজান আলীর নাম না থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে তাঁর (রমজান) নাম দেখতে পায়। এতে কলেজ কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে ওয়েবসাইট হ্যাক করে রমাজানের নাম ভর্তি তালিকায় সংযুক্ত করা হয়েছে। রমজান ঘটনায় যুক্ত রয়েছেন

পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রশাসন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে রমজান আলীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ওয়েবসাইটে প্রবেশের জন্য যার কাছে পাসওয়ার্ড (গোপন সংকেত) সংরক্ষিত ছিল ঘটনায় তাকেও আটক করে পুলিশ। অন্যদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে গা-ঢাকা দেন ছাত্রলীগের দুই নেতা

পরে শিক্ষার্থী রমজান আলীকে অভিযুক্ত করে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ১৮ () (), ১৯ () ৩৩ ধারায় বাদী হয়ে মামলা করেন কলেজের একজন শিক্ষক। উল্লিখিত ধারায় বলা আছে কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে উপাত্ত ভান্ডারের তথ্য পরিবর্তন, সংযোজন, ক্ষতিসাধন সহায়তা করার অপরাধ। 

অভিযুক্ত রমজান আলীকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত রমজানের বয়স বিবেচনায় নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গী কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এগারো দিন সংশোধনাগারে থাকার পর জামিন পান রমজান। পরে আবার আবেদন করে পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি আইনে দায়ের করা মামলা থেকে পরিত্রাণ পাননি। প্রতিমাসে তিনি তার বাবাকে নিয়ে আদালতের ঘুরছেন। 

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রমজান আলী বলেন, ঘটনায় আমার কোনো দোষ ছিল না। তারপরও ১১দিন জেল খাটলাম। আমি কেবল পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। এই চাওয়া কোনো দোষ হতে পারেন না। যারা আমাকে ফাঁসিয়েছে তাদেরকে মামলায় অন্তুর্ভুক্ত করা হয়নি। তারপরও আমি ওই মামলা থেকে নিস্তার চাই। 

বাবা গোলাপ মিয়া বলেন, ছেলেকে প্রতিমাসে আদালতে প্রতিমাসে হাজিরা দিতে হয়। আইনজীবিসহ অন্যান্য খাতে খরচ করতে হয়। ভ্যান চালিয়ে টাকা যোগাতে হয়। 

 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ময়মনসিংহ সিআইডির পরিদর্শক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, তিনি বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। মামলায় অভিযুক্তের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোন ফরেন্সিক বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছুই পাওয়া যায়নি। কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটটি আদৌ হ্যাক হয়েছিল কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি। অবস্থায় মামলাটি তিনি রেখে এসেছেন।