
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। অথচ সবচেয়ে অবহেলিত, বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার তারাই। যুগের পর যুগ ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে গেলেও, প্রতিবারই তাদের কণ্ঠ রোধ করতে দেওয়া হয়েছে আশ্বাসের গ্লানি। কিন্তু বাস্তবতা কি বদলেছে?
প্রতিশ্রুতির ফাঁদঃ প্রতি বছর যখন শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, ঈদ বোনাসের দাবি উঠে, তখনই আশ্বাসের ঝড় বয়ে যায়। নীতিনির্ধারকেরা প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মুখ দেখে না কখনোই। বিশেষত জাতীয়করণের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চললেও, শিক্ষকদের দাবি উপেক্ষিত থেকে গেছে। ১৯৯৪ সাল থেকে শিক্ষকেরা জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০১৮ সালে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নীতিগত ঘোষণা আসলেও, তা কার্যকর হয়নি। বরং ২০২১, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের আন্দোলন দমানোর জন্য নানা কৌশল নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকেরা রাজপথে অবস্থান নিলে, তাদের প্রতি দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে।
বৈষম্যের শেকলে আবদ্ধ শিক্ষক সমাজ। বেসরকারি শিক্ষকদের মূল সমস্যাগুলো হলঃ ১. সরকারি শিক্ষকদের মতো একই কাজ করলেও বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য। ২. বাড়িভাড়া, ঈদ বোনাস, চিকিৎসা ভাতার অভাব। ৩. অবসরের পর কোনো পেনশন সুবিধা না থাকা। ৪. শিক্ষকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তার অভাব।
এসব বৈষম্য দূর করার একমাত্র পথ দাবি আদায়ের আন্দোলন। তবে শুধু রাজপথে নয়, এই আন্দোলন শুরু করতে হবে শ্রেণিকক্ষ থেকেও। শিক্ষক যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি হন, তবে কেন তাদের অধিকার হরণ করা হবে? জাতীয়করণ: দয়া নয়, অধিকার। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে টেকসই ও মানসম্পন্ন করতে হলে, শিক্ষকদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের আওতায় আনতে হবে। এটা কোনো করুণা নয়, এটি শিক্ষকদের প্রাপ্য অধিকার। যতদিন পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষক নিজের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হয়ে উঠবেন না, ততদিন এই বৈষম্যের শেকল ভাঙা সম্ভব নয়। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, গড়ে তুলতে হবে কঠিন ও সুসংহত প্রতিবাদ। শিক্ষকদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে, কিন্তু তাদের ন্যায্য দাবি বন্ধ করা যাবে না। আজ সময় এসেছে একযোগে দাবি জানানোর। জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি, এবং এটি বাস্তবায়ন করতে হবে এখনই।
লেখক মো. শরীফ হোসেন
সহকারি শিক্ষক
আল-আজম হাইস্কুল এন্ড কলেজ
বিশ্বনাথ, সিলেট।