বুধবার, জানুয়ারী ২২, ২০২৫ ||

মুক্তদিন
হোম / খবর

মানুষের গল্প

৭০ বছর বয়সেও রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে জীবন চালান তিনি

প্রকাশ:

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ২১, ২০২৫ || ০১:২৫

62

মুক্তদিন প্রতিবেদনঃ

৭০ বছর বয়সেও রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে জীবন চালান তিনি

ছবিঃ মুক্তদিন

বসয় সত্তর ছাড়িয়েছে।ভেঙে পড়েছে শরীর।এ বয়সে অবসরে যাওয়ার কথা।কিন্তু সে সুযোগ হল না তার।জীবনের তাগিদে সত্তর বছর বয়সে এসেও রিকশা চালানো মত কঠিন কাজ করে নিজের জীবন চালাতে হচ্ছে তার।ব্যাটারিচালিত রিকশাও নয়, একেবারে প্যাডেলচালিত রিকশা চালিয়ে নিজের জীবন চালাচ্ছেন তিনি।

তার নাম আব্দুল গফুর। বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার নতুন বাজার এলাকায়। প্রতিদিন সকাল সাতটার মধ্যে চলে আসেন ময়মনসিংহ শহরে।গ্যারেজ থেকে ভাড়ায় চালিত একটা রিকশা নিয়ে কাজে নেমে পড়েন সাড়ে সাতটার মধ্যে। এ বয়সে শরীর খুব বেশি চলে না। যে কারনে নগরের কম ব্যস্ত এলাকায় রিকশা চালন। বিশেষ করে সকালে সানকিপাড়া কাঁচা বাজার থেকে বাজার সেরে অল্প দূরত্বে বাড়ি ফেরা মানুষদের বাড়িতে পৌঁছে দেন নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে।

আজ সকালে সানকিপাড়া বাজারের সামনে কথা হয় আব্দুল গফুরের সঙ্গে। জীর্ণ শীতের পোশাক আর খুব মলিন একটা লুঙ্গি তার পরনে। পোশাকের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে তার মুখটাও মলিন।

সানকিপাড়া থেকে চল্লিশ টাকা ভাড়ায় ময়মনসিংহ নগরের আর.কে. মিশন রোড যেতে যেতে কথা হয় আব্দুল গফুরের সঙ্গে।

আব্দুল গফুর জানান, সংসারে তিনি একা। বরো বছর আগে একমাত্র ছেলে আর সাত বছর বয়সে মারা যান স্ত্রী। এরপর থেকে একাই আছেন। সারা দিন রিকশা চালিয়ে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা হয় উপার্জন। এরমধ্যে প্রতিদিনের রিকশার ভাড়া দিতে হয় ৮০ টাকা। মুক্তাগাছা থেকে ময়মনসিংহের আসা যাওয়ার খরচ ৮০ টাকা। এরপর যা থাকে তা দিয়ে চাল-ডাল কিনে নিয়ে যান বাড়িতে। নিজেই রান্না করেন। রাতে একবার ভাত খান। দিনের বেলায় খান রুটি।

শরীর দুর্বল থাকায় প্রতিদিন কাজে আসতে পারেন না। যেদিন কাজে না আসতে পারেন সেদিন অল্প খেয়ে বা বাসি খাবার খয়ে কেটে যায় দিন।

আলাপচারিতায় জানা যায়, আব্দুল গফুরের একজন ভাই ছিল। সে ভাইও মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। যে কারনে সংসারে এখন আপন বলতে আর কেউ নেই। যতদিন শরীর চলে ততদিন রিকশা চালিয়েই জীবন চালানোর ইচ্ছা। শরীর পড়ে গেলে কি হয় হবে সেটা ভেবে মাঝে মাঝে খুব হতাশ হন।

সরকারি কোন ভাতা পান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল গফুর বলেন, দুয়েক বার ভাতার জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভাতার ব্যবস্থা করতে পারেননি।

জীবনের বিশেষ চাহিদার কথা জানতে চাইলে আব্দুল গফুর বলেন, বর্তমানে তার একটা মাত্রই লুঙ্গি। আর একটা লুঙ্গি হলে ভাল হতো।