
নিহতের বাবার অভিযোগ লাশ ফেলার আগাম ঘোষণা ফেসবুকে প্রচার করার ১৯ দিন পর তাঁর ছেলেকে নৃশংসভাকে হত্যা করেছে দুর্বত্তরা। তিনি এ ঘটনার বিচার দারি করেছেন।
নিহত মারফত আলী নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের ধুরুয়া গ্রামের মো. কাশেম আলী ফকিরের ছেলে। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকাবহ পরিবেশ। লাশ বাড়িতে না আনা হলেও বাড়ির সামনে চলেছে লাশ দাফনের প্রস্তুতি।অন্যদিকে বাড়ির ভেতরে চলছে সন্তানহারা মায়ের বুকফাঁটা আর্তনাদ।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার ছিল মারফতের ভাগ্নির বিয়ে। বিয়ে উপলক্ষে মারফত আলী তাঁর বোনের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের সাখুয়া মাঝের চর গ্রামে যান। সেখানে গিয়ে মামা হিসেবে ভাগ্নির বিয়েতে আগত বরযাত্রিদের আপ্যায়ন করেন তিনি। বিয়ে শেষ হওয়ার পর বিকাল পাঁচটার দিকে বরযাত্রী, বর ও ভাগ্নিকে বিদায় জানান।
এ সময় তাদেরকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য দুজন বরযাত্রীর বহন করা একটি মোটরসাইকেলে চেপে বসেন মারফত আলী।
মাগরীবের নামাজের কিছুক্ষণ আগে মারফত আলীকে বহন করা মোটরসাইকেলটি পাশের গৌরীপুর উপজেলার ভাঙনামারী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ি মাদ্রসার সামনের গ্রামীণ সড়কে কাছে পৌছায়।
এ সময় বিপরীত দিক থেকে একাধিক মোটরসাইকেলে আসা দুর্বত্তরা মারফত আলীর উপর হামলা চালায়। দুর্বত্তরা মারফতসহ অন্য দুজনকে দেশিয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় সড়কে ফেলে চলে যায়। আর্ত চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে একটি মোটরসাইকেল আটক করলেও দুর্বত্তরা পালিয়ে যায়।
পরে গুরুতর আহত তিনজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত তিনটার দিকে মারফত আলী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ও্ই এলাকার ইউপি সদস্য আবদুল বারেক জানান, তিনি লোকমুখে শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে শুনতে পান দুর্বত্তদের হামলার কথা।
মারফতের বাবা কাশেম ফকির আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমার ছেলেটি ছিল খুবই সরল সোজা। সে ক্রিকেট খেলা খুব পছন্দ করতো। সমবয়সী ছাড়াও শিশুদের সাথে তাঁর মেলামেশা ছিল। নাতনির বিয়ে উপলক্ষে মারফত তার বোনের বাড়ি গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারই নিজের গ্রামের (নান্দাইলের ধুরুয়া গ্রাম) একটি সন্ত্রাসী চক্রের হাতে নৃশংসভাবে খুন হবে জানলে ছেলেকে ওখানে পাঠাতাম না।
বাড়ির সামনে বসে মারফতের বাবা কাশেম ফকির অভিযোগ করে বলেন, ধুরুয়া গ্রামের উসমান খাঁর পুত্র ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর তার পুত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, গত ৩০ মার্চ ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গ্রামের কয়েকজনের নাম লিখে লাশ ছাড়া শেষ হবে না । একটা করলে যা হবে পাঁচটা করলেও তা হবে... ইত্যাদি লিখে পোস্ট দেন।
এলাকার কয়েকজন তরুণ জানান, কোপানোর পর রক্তাক্ত মারফতের ছবি তানভীরের ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল। তবে রাত ১০ টার দিকে সেই পোস্ট মুছে ফেলা হয়।
ধুরুয়া গ্রামের আরও ১০ জন বাসিন্দা বলেন, মারফত হত্যাকাণ্ডের সাথে ৩০ মার্চ তানভীরের ফেসবুকে দেওয়া পোস্টের যোগসূত্র রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর এর আগেও ফেসবুক লাইভে এসে আগাম ঘোষণা দিয়ে ধুরুয়া, চÐীপাশা, রসুলপুর, কাটলীপাড়া গ্রামের অন্তত দশজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এসব ঘটনায় ওয়াহিদুজ্জামান তানভীরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু কোনো মামলায় তিনি কখনও গ্রেপ্তার হননি বলে জানান গ্রামবাসী। এ কারণে কখন কার ওপর হামলা হয় তা নিয়ে গ্রামের লোকজন সবসময় আতংকে থাকেন।
এর আগে তানভীরের হামলায় আহত হন মোজাম্মেলক হক। ছবিঃ মুক্তদিন
এলাকার ইউপি সদস্য মাহফুজুল বারী তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, তানভীর ফেসবুক লাইভে এসে আগাম ঘোষণা দিয়ে দলবল নিয়ে গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালায়। আহতদের পরিবার থানায় মামলা করেও কোনো বিচার পাচ্ছে না। এখন মারফত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিবারের লোকজন মামলা করার জন্য গৌরীপুর থানায় যেতে ভয় পাচ্ছে বলে তিনি জানান।
নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে মুক্তদিনকে বলেন, ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর একাধিক সিমকার্ড ব্যবহার করেন। তাই তাঁর অবস্থান সনাক্ত করা যাচ্ছে না। এছাড়া তিনি মাঝেমধ্যে ফেসবুক ব্যবহার করলেও তার আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ ও র্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে সনাক্ত করতে পারছে না। তবে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।