
হারুনের বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা ছিলেন। শহরের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে তিনি সবজি বিক্রি করতেন।
পড়াশোনা ইতি ঘটলে হারুনও হাল ধরেন পরিবারের। ২০১০ সালে গৌরীপুর পৌর শহরের একটি মুদি দোকানে কাজ নেন হারুন। এক বছর মুদি দোকানে থেকে আশানুরূপ বেতন না পাওয়ায় কাজ ছেড়ে দেন।পরে গৌরীপুর পৌর শহরের কালীখলায় একটি ভাতের হোটেলের সামানের দিকের খোলা অংশে নিজেই একটি চায়ের দোকান দেন।
এ চায়ের দোকানেই পেছনের একটি অংশে বই নিয়ে হারুন শুরু করেন পাঠাগার। প্রথমে চা পান করতে আসা গ্রাহকেরাই ছিলেন পাঠক। পরে হারেুনর ব্যতিক্রমী এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিরা হারুনের পাঠাগারে বই দিতে থাকেন। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে হারুনের পাঠাগারে বেড়ে যায় বইয়ের সংখ্যা। চায়ের গ্রাহক ছাড়া সাধারণ পাঠাগারদের বাড়িতে নিয়ে বই পড়ার সুযোগ করে দেন হারুন। ক্রমেই ছড়িয়ে পরে হারুনের পাঠাগার কার্যক্রম। তবে সম্প্রতি ঘটে গেছে বিপত্তি।যে দোকানে দীর্ঘ সময় ধরে চলছিল হারুনের চা বিক্রি ও পাঠাগার কার্যক্রম সে দোকানের মালিক ভাতের হোটেল ও হারুণের চা দোকানটি তুলে দিয়েছেন। এতে বই ও চায়ের দোকানসহ হারুনকে উচ্ছেদ হতে হয়।
সংসারের অভাবের কারনে স্কুল ছেড়ে দিলেও পড়াশোনা ছাড়েননি হারুন। চা বিক্রির পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসিতে ভর্তি হন হারুন। ২০২১ সালে চা বিক্রির পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ২০২৩ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করেন তিনি।
মূলত ২০২৩ সালে হারুন নিজের দোকানের চায়ের গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে শুরু করে পাঠাগার কার্যকম। তার উদ্দেশ্যে ছিল মানুষকে মোবাইল ফোনের আসক্তি কাটিয়ে বইমুখী করা। দুই বছরের মধ্যে হারুণের পাঠাগার কার্যক্রম স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সারা ফেলে। বাংলাদেশের প্রথম সারির সকল গণমাধ্যমে হারুণের পাঠাগার নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও এই চা-দোকানি তার দোকানে নিয়মিত চা খেতে আসা গ্রাহকদের প্রতি বছর বর্ষসেরা চা’প্রমী নির্বাচিত করে সম্মাননা প্রদান করেন। চা বিক্রেতার এই কাজটিও ব্যাতিক্রম হওয়ায় আলোচনায় আসেন তিনি। মানুষকে বইমুখী করার লক্ষ্যে ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু হওয়া হারুন পাঠাগারটিতে এখন বই সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি এবং পাঠক সংখ্যা তিনশতাধিক।
বর্তমানে মা আর ছোট বোনকে নিয়ে তিনজনের সংসারে একমাত্র আয়ের উৎস ছিলো চা স্টললটি। কিন্তু গত নভেম্বর মাসে হারুনের চায়ের দোকান ও পাঠাগারসহ মোট চারটি দোকানকে সরিয়ে নেওয়ার নোটিশ দেন জায়গার মালিক। যে কারনে দেড় হাজার বই আর চা স্টলটি নিয়ে বিপাকে আছেন হারুন মিয়া।