সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫ ||

মুক্তদিন
হোম / খবর

হাজংদের ভাষা রক্ষায় এক তরুণের চেষ্টা

প্রকাশ:

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০২৫ || ০২:২৬

216

কামরান পারভেজ, মুক্তদিন

হাজংদের ভাষা রক্ষায় এক তরুণের চেষ্টা

ছবিঃ অন্তর হাজংয়ের ফেসবুক থেকে নেওয়া


ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নের লাঙ্গলজোড়া গ্রামের আদিবাসী হাজং সম্প্রদায়ের একটি বাড়ি। ৩০ থেকে ৪০জন হাজং শিশু কয়েকজন বয়স্ক মানুষ ত্রিপল বিছানো আঙ্গিনায় বসে গভীর মনোযোগের সঙ্গে শুনছে একজনের কথা।

তিনি শিশুদের উদ্দেশ্যে করে বলছেন, “বলতো চড়ুই পাখিকে হাজংদের ভাষায় কি বলে।”

কেউ উত্তর দিতে পারছে না। পরে বয়স্ক নারী পরুষদের উদ্দেশ্যে বলছেন, আপনারা জানেন।

তারাও দিতে পারেননি। এরপর বক্তা নিজেই উত্তরটা দিয়ে দেন। চড়ুই পাখিকে হাজংদের নিজস্ব ভাষায় বলেআংরুক’।

 

রকম ভাবে বক্তা একের পর এক মুরগি, হাঁস, কবুতরকে হাজং ভাষায় কি বলে জানতে চাইলে শিশুদের কেউ উত্তর দিতে পারেনি। পরে বক্তা শিশু বয়সীদের উদ্দেশ্যে করে বলতে থাকেন, দিনে দিনে হাজং ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। হাজংরা এখন ঘরোয়া পরিবেশেও নিজেদের ভাষায় কথা বলে না।

 

বক্তার নাম অন্তর হাজং। বাংলা বা অন্য কোন ভাষার প্রতি তার কোন বিদ্বেষ নেই। তবু অন্তত ঘরোয়া পরিবেশে হাজং সম্প্রদায়ের মানুষ যদি নিজেদের ভাষার চর্চা না করে তাহলে ভাষাটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এমন শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আক্ষেপ করেন।

 

অন্তর হাজং অন্তক আট বছর ধরে হাজং ভাষা রক্ষাসহ হাজং সম্প্রদায়ের জন্য নানা ধরণের সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।তার বাড়ি নেত্রকোন জেলার দুর্গাপুর উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী খুজিগড়া গ্রামে। গ্রামটি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার লাগোয়া।

 

অন্তর হাজং পড়াশোনা করছেন ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বে। সময় পেলেই ছুটে যান নিজ এলাকায় হাজং সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে। শুধু হাজংদের ভাষা সংস্কৃতি রক্ষা করতেই তিনি কাজ করছেন না, বরং হাজংদের বন্ধু হয়ে সব সময় তাদের পাশে দাড়াচ্ছেন। দরিদ্র হাজং শিক্ষার্থীদের জন্য বই কিনে দেওয়া, খাতা-কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দেওয়া, কারও ফরম পুরণের টাকা না থাকলে তা যোগাড় করে দিতে কাজ করছেন অন্তর হাজং।

 

সম্প্রতি ধোবাউড়া উপজেলার লাঙ্গলজোড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় অন্তর হাজংয়ের সঙ্গে। তিনি জানান, হাজংদের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি দিনে দিনে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এর কারন হাজংরা নিজেরাই শিশুদের সঙ্গে হাজং ভাষায় কথা বলে না। গ্রামের মা-বাবাও কথা বলার সময় কিছু হাজং শব্দ ব্যবহার করলেও শহরে বাসবাসাকালী হাজংরা একদম নিজেদের ভাষা ব্যবহার করেন না।বিষয়টা উপলব্ধি করেই তিনি হাজং ভাষা সংস্কৃতি রক্ষায় কাজ শুরু করেন ২০১৭ সাল থেকে। পাশাপাশি দরিদ্র হাজং শিশুদের এবং অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন

অন্তর হাজং জানান, সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ হাজার হাজং থাকার কথা বলা হয়। তবে বাস্তবে আরও কয়েক হাজার বেশি হবে। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর সুনামগঞ্জ জেলার মোট ১০১টি গ্রামে হাজংদের বসবাস। ওই ১০১ টি গ্রামেই হাজংদের কাছে গিয়ে ভাষা সংস্কৃতি রক্ষার কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ গ্রামই ঘুরা হয়ে গেছে। ঘুরে ঘুরে বয়স্ক লোকদের কাছ থেকে হাজং ভাষার শব্দা, হারিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতির কথা সংগ্রহ করেন। এসব শব্দ তিনি লিখে রাখেন। অন্তর হাজংয়ের দাবি, গারোদের ভাষা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই ইংরেজী বর্ণমালায় বই প্রকাশ করা হচ্ছে। তেমনি হাজংদের ভাষায়ও বই প্রকাশ করা হোক। তাতে করে হাজং ভাষাটি টিকে থাকবে

 


এসব কাজের প্রয়োজনীয় টাকার জন্য একটি ফাউন্বেডশন প্রতিষ্ঠা করেছেন অন্তর হাজং। সামর্থ্যবান হাজং ছাত্ররা এখানে টাকা জমা করেন। এমনকি টিউশনির টাকা থেকেও অনেকেই ফাউন্ডেশানে টাকা দেন। অন্তর হাজং বলেন, খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। আমরা একটু হিসাব করে চললেই কিছু টাকা বেঁচে যায়। যেমন, আমার কোন ধরণের নেশা নেই। এমনকি আমি কখনোই চা খাই না। এতে আমার কিছু টাকা বেঁচে যায়। সে টাকা আমরা হাজংদের সেবায় ব্যয় করি।

 

 

-----Ad1----