শুক্রবার, জুলাই ১৮, ২০২৫ ||

মুক্তদিন
হোম / সারাদেশ

২০০ বছরের ঐতিহ্য

মুক্তাগাছার মণ্ডার একাল সেকাল

প্রকাশ:

রবিবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২৫ || ১২:৩৫

517

মুক্তদিন প্রতিবেদনঃ

মুক্তাগাছার মণ্ডার একাল সেকাল

ছবিঃ মুক্তদিন

এখন থেকে ২০০ বছর আগের কথা। মুক্তাগাছায় তখন মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর মহাদাপট। ওই সময় মুক্তাগাছায় মণ্ডা নামের এক ধরণের মিষ্টি তৈরি করে বিক্রি করতেন গোঁপাল পাল নামের স্থানীয় একজন বাসিন্দা।ছানা ও চিনি দিয়ে তৈরি করা ওই সুস্বাদু খাবার একদিন গেল জমিদার সূর্যকান্তের প্রসাদে। জমিদার মশাইয়ের ভীষণ পছন্দ হল সে খাবার। এরপর থেকে মণ্ডা নামের ওই মিষ্টান্ন নিয়মিতই যেত জমিদার বাড়িতে। এমনকি জমিদার বাড়িতে নামী-দামি অতিথি এলে অতিথি আপ্যায়নেও পরিবেশন করা হতো এ মণ্ড।

এবার ২০০ বছর পর, অর্থাৎ আজকের এ সময়ে আসা যাক।মণ্ডা নামের সে মিষ্টান্নটি এখন তৈরি হয় মুক্তাগাছায়। সেই গোঁপাল পালের পঞ্চম পরুষদের হাতে এখন তৈরি হচ্ছে মণ্ডা। দুইশ বছরের পথচলায় মণ্ডা এখন বাংলাদেশের সীমানা ছেড়ে পেয়েছে আন্তজার্তিক পরিচিতি।২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মণ্ডা পেয়েছে জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) পণ্যের মর্যাদা। মণ্ডা এখন প্রিয় খাবারের পাশাপাশি হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য।তরুণ প্রজন্ম যতটা না মণ্ডা খেতে পছন্দ করে, তারচেয়ে বেশি মণ্ডা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দিতে বেশি পছন্দ করে।

সম্প্রতি মুক্তাগাছা পৌর শহরের জগৎকিশোয় সড়কে গোঁপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকানে গিয়ে কথা মণ্ডা দোকানের মালিকপক্ষ, ক্রেতা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। সরেজমিনে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপর মোটরসাইকেলে চরে তরুণেরা আসছেন মণ্ডার দোকানে। বেশির ভাগ তরুণ মণ্ডা কেনার আগে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন।গাজীপুর থেকে আসা তরুণ রিফাত জানান, অনেক বছর ধরেই তিনি মুক্তাগাছার মণ্ডার কথা জানেন। এবার সুযোগ পেয়ে তিনি মণ্ডা নিয়ে একটি ভিডিও স্টোরি করতে চান। যে কারনে দুই বন্ধু মিলে গাজীপুর থেকে এসেছেন মুক্তাগাছায়। ফেরার সময় মণ্ডা কিনে যাবেন। রিফাতের মত আরও কয়েকজন তরুণ মণ্ডা কেনার আগে ও পরে ভিডিও করেন মণ্ডার দোকানের ভেতর ও বাইরের নানা বিষয়। তাদের একজনের নাম রফিকুল। রফিকুল জানান, তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলায়। সম্প্রতি ময়মনসিংহ শহরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। এই প্রথম তিনি ময়মনসিংহে  এসেছেন।কাজেই সময় করে তিনি মণ্ডার দোকানটি দেখতে এসেছেন। পাশাপাশি তিনি ভিডিও স্টোরি করতে চান।

মণ্ডার দোকানের ম্যানেজার লিটন জানান, প্রতিদিনই ময়মনসিংহের বাইরের জেলা থেকে আসেন অসংখ্য ক্রেতা। তারা মণ্ডা কেনার পাশাপাশি ছবি তুলেন এবং অনেক তথ্য জানতে চান।

মণ্ডার দোকানের পাশের বাড়ির বাসিন্দা পরিতোষ করের বয়স সত্তর ছাড়িয়েছে। তিনি নিজের শৈশবকালের স্মৃতিচারণ করে ষাটের দশকের মণ্ডার দোকানের বর্ণানা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমার মনে আছে ছোট আকারের মণ্ডা আট আনায় এবং কিছুটা বড় আকারের মণ্ডা দশ আনায় কিনে খেতাম। কৈশোর বয়সে একবার ৫ টাকায় কিনেছিলাম এক সের মণ্ডা। তখন প্রতিদিন দুপুরে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা মণ্ডার দোকানের সামনে দাঁড়ালে দোকানের মালিক আমাদের বিনা পয়সাতেও মণ্ডা দিতেন।

মুক্তাগাছার মণ্ডার সবচেয়ে বড় একটি বৈশিষ্ট হচ্ছে, মণ্ডা তৈরির ‘গোপন রহস্য’ গোপাল পালের বংশধর ছাড়া আর কেউ জানে না। দীর্ঘ ২০০ বছর পরও মণ্ডা তৈরির বিষয়টিকে একটি ‘রহস্য’ হিসাবে রেখেছে এ পরিবার। কথিত আছে মণ্ডা তৈরির বিশেষ সে রহস্য ফাঁস করতে চান না গোঁপাল পালের বংশধরেরা। যে কারনে মণ্ডা তৈরিতে অনেক শ্রমিক কাজ করলেও মণ্ডা তৈরির জন্য ছানা ও চিনির মিশ্রণটা পরিবারের সদস্যদের বাইরে আর কেউ করেন না। বাংশানুক্রমিক ভাবেই মণ্ডা তৈরি করেন পরিবারের সদস্যরা। গোঁপাল পালের পঞ্চম প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারের মত পেশায় আছেন কেউ কেউ। তারাও জানেন মণ্ডা তৈরির কৌশল। ছুটিতে বাড়িতে গেলে এখনো তারা মণ্ডার তৈরির কাজ করেন।

উইকিপিডিয়া ও মণ্ডার দোকানের মালিকপক্ষের সূত্রে জানা যায়, গোঁপাল পাল ১৮২৪ সালে মুক্তাগাছায় প্রতিষ্ঠা করেন প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকান। গোঁপল পাল মারা ১৯০৭ সালে। এরপর থেকে গোপাল পালের উত্তরসূরি রাঁধানাথ পাল, কৈঁদারনাথ পাল, দ্বাঁরিকানাথ পাল মণ্ডার দোকান চালান। বর্তমানে এ পরিবারের পঞ্চম প্রজন্মের হাত ধরে চলছে ২০০ বছরের পুরানো এ মণ্ডার দোকনটি।

উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মত ব্যক্তিরাও এ মণ্ডার স্বাদ নিয়েছেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ অঞ্চলে গেলে এ মণ্ডার স্বাদ নিয়েছেন।আব্দুল হামিদ খান ভাসানী মণ্ডার স্বাদে মুগ্ধ হয়ে চীনের মাও সে তুংয়ের জন্য এ মণ্ডা নিয়ে গিয়েছিলেন।

 


Warning: PHP Startup: Unable to load dynamic library 'oci8.so' (tried: /opt/alt/php81/usr/lib64/php/modules/oci8.so (libclntsh.so.12.1: cannot open shared object file: No such file or directory), /opt/alt/php81/usr/lib64/php/modules/oci8.so.so (/opt/alt/php81/usr/lib64/php/modules/oci8.so.so: cannot open shared object file: No such file or directory)) in Unknown on line 0

Warning: PHP Startup: Unable to load dynamic library 'pdo_oci.so' (tried: /opt/alt/php81/usr/lib64/php/modules/pdo_oci.so (libclntsh.so.21.1: cannot open shared object file: No such file or directory), /opt/alt/php81/usr/lib64/php/modules/pdo_oci.so.so (/opt/alt/php81/usr/lib64/php/modules/pdo_oci.so.so: cannot open shared object file: No such file or directory)) in Unknown on line 0