
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার ৮৬ জনের স্বাক্ষরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজ-বিরোধী কাজ ও অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার সন্দেহে এ অভিযোগ করা হয়। গতকাল রোববার (৯মার্চ) এ অভিযোগটি করা হয়।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের শেষ নেই বলে জানা যায়। তবুও দুর্নীতি ও অনিয়মে ভরপুর এই কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল আছেন বহালতবিয়তে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও নেই জোরালো কোন পদক্ষেপ।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কলেজে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মোস্তফা কামাল। তিনি যোগদানের প্রায় দুই বছর পার হলেও গঠন করেননি কলেজের গভর্নিং বডির কমিটি। কিন্তু কমিটি না থাকলেও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কলেজের ৩ শিক্ষককে শোকজ এবং একজনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল৷ কলেজের গভর্নিং কমিটির এখতিয়ার ছাড়া অধ্যক্ষ এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বলে জানান কয়েকজন শিক্ষক।
এছাড়াও কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের বেশ কয়েকটি অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, শারীরিকভাবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করাসহ কলেজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সব প্রভাষক মিলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউএনওর কাছে একটি অভিযোগ করেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই প্রভাষকের কাছে যুগ্ম সচিব পরিচয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজের প্রভাষক মানিক চন্দ্র দেবনাথ থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন । তার আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে থাকা একটি ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক খুলে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে বিতর্কিত ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উচাখিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম। তারও আগে গত (২৭ জানুয়ারি) জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ পালন না করা এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি করে কলেজের জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠে। এছাড়া বিভিন্ন সময় পড়ালেখা বাবদ অধ্যক্ষের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ছেড়ে দিতে বলার অভিযোগও আছে মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অসংখ্য সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কলেজের প্রভাষক মানিক চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ' আমাদের অধ্যক্ষের দুর্নীতির কারণেই সব শিক্ষকের সাথে উনার সম্পর্ক নষ্ট। উনার দুর্নীতির ধরণ এবং প্রমাণসহ অনেকদিন আগেই ইউএনও স্যারের কাছে কলেজের ৮ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দিয়ে আমরা বিচারপ্রার্থী হয়েছি।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল বলেন, “আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র উঠে-পড়ে লেগেছে। আমি নিয়ম-নীতি মেনেই কলেজ চালিয়ে যাচ্ছি। চক্রটি আমার কাছ থেকে কোন ধরণের অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিতে পারছে না। এটিই তাদের আক্রোশের মূল কারণ। আমার ওপর আনীত সবগুলো অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হাসান খান সেলিম বলেন,' “অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যতগুলো অভিযোগ হয়েছে সবগুলোই সত্য। তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। এই অধ্যক্ষ যোগদানের পর কলেজের ভাবমূর্তি ও শিক্ষা-কার্যক্রম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। তাই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি ।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, “অধ্যক্ষ মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে আমি দুটি অভিযোগ পেয়েছি। দুটিরই তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। একটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। অপর একটি অভিযোগের তদন্ত কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, ' আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগুলোর প্রেক্ষিতে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্তকাজ চলমান রয়েছে।