
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আবুদল হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনায়েত হোসেন ভূঁইয়া অবসর নেওয়ার চারদিন আগে বিদ্যালয়ের পুরাতন একটি টিনের ঘর বিক্রির জন্য এক সাজানো নিলাম ডাকের আয়োজন করেন। সেই নিলামে নিজেই সাজানো এক ক্রেতার মাধ্যমে নিজেই পানির দরে ওই ঘরটি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এলাকায়।
গত ২৭ মার্চ কথিত নিলাম ডাক অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ মার্চ প্রধান শিক্ষক অবসরে চলে যান। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব (ভারপ্রাপ্ত) পালন করছেন তার (এনায়েত হোসেনের) স্ত্রী শামছুন্নাহার।
তবে এনায়েত হোসেন ভূঁইয়া দাবি করছেন, ঘরটি তিনি নিলাম ডাককারীর কাছ থেকে কিনে রেখেছেন। অপর দিকে এলাকার বাসিন্দাদের ভাষ্য, ঘর বিক্রির নিলাম ডাক আয়োজনের বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে এলাকায় কোনো মাইকিং করা হয়নি।
আবদুল হোসেন বিদ্যালয়টি নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত ঘরটির পাকা মেঝে পড়ে রয়েছে। ঘরের টিনের চাল, বেড়া ও অন্যান্য উপকরণ সদ্য সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. এনায়েত হোসেন ভূঁইয়ার নতুন বাড়ি ভিটার আশেপাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভাতিজার জমি দখল করে বাড়ি তৈরির অভিযোগ উঠায় বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণ পাশে ছিল টিন দ্বারা নির্মিত ছিল ৬৬ হাত দৈর্ঘ্য ও নয় হাত প্রস্থ বিশিষ্ট ঘরটি। বিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক মো. এনায়েত হোসেন ভূঁইয়া ৩১ মার্চ অবসরে গেছেন। তার স্ত্রী শামছুন্নাহার এখন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ঘরটি হতিয়ে নেওয়ার জন্য অবসরের চারদিন আগে সাজানো নিলাম ডাকের আয়োজন করা হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনায়েত হোসেন ভূঁইয়া তা অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি নান্দাইলের তৎকালীন ইউএনও অরুন কৃষ্ণ পালের নির্দেশে নিলাম কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিলাম কমিটির সভাপতি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. শামছুন্নাহার (এনায়েত হোসেনের স্ত্রী), সদস্য ছিলেন প্রধান শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ তিনজন শিক্ষক। গত ২৭ মার্চ নিলাম ডাক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে হিমেল মিয়া নামে এক ব্যক্তি ৩২ হাজার টাকায় স্কুলঘরটি কিনে নিয়েছেন। এনায়েত হোসেন হিমেল মিয়ার কাছ থেকে ঘরটি কিনে রেখেছেন বলে জানান।
নান্দাইলের তৎকালীন ইউএনও অরুন কৃষ্ণ পাল বর্তমানে সরিষাবাড়ি উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। গত ডিসেম্বর মাসে তিনি নান্দাইল থেকে বদলি হন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বদলি হওয়ার আগে এ ধরনের কোনো নির্দেশ তিনি দেননি।
নান্দাইলের বর্তমান ইউএনও সারমিনা সাত্তার বলেন, নিলাম ডাক আয়োজনের জন্যে উপজেলায় আলাদা কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বিক্রির নিলাম ডাকের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
বিদ্যালয়ের কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা মো. জালাল উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের লাখ টাকার বেশি মূল্যের একটি টিনের ঘর পানির দরে কিনে নিয়েছেন। অথচ এলাকার বাসিন্দারা কিছুই জানতে পারেনি।এ ধরনের অনিয়ম তো হতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা যায়, যে তিনজন ক্রেতাকে দিয়ে নিলাম সাজানো হয়েছে তাঁরা প্রধান শিক্ষক এনায়েত হোসেন ভূঁইয়ার পরিচিতি ও ঘনিষ্ঠ। কেউ আবার আত্মীয়।
জানতে চাইলে আবদুল হোসেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আজিজুল হক বলেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক সবকিছু আইনসম্মতভাবে করেছেন বলে তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন কেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।