সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫ ||

মুক্তদিন
হোম / খবর

ঈশ্বরগঞ্জ

রাজনীতির এক ব্যতিক্রম লুৎফুল্লাহেল মাজেদ

প্রকাশ:

বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২৫ || ০৫:০১

430

কামরান পারভেজ, মুক্তদিন

রাজনীতির এক ব্যতিক্রম লুৎফুল্লাহেল মাজেদ

ছবিঃ সংগ্রহীত

গত আগস্টের মাসের কথা ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ মুক্তির আনন্দে তখন দেশের সাধারণ মানুষের মনে উৎসবের আমেজ ওই সময় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিবেন জুলাই আন্দোলনের সময় ফ্যাসিবাদ সরকারের হাতে আটক হয়ে আয়নাঘরে নির্যাতনের শিকার বিএনপি নেতা লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু

ততদিনে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য দেশের নানা জায়গায় বিএনপির নেতারা তৎপর হয়ে ওঠেছেন ধারণা ছিল সাংবাদিকদের সামনে লুৎফুল্লাহেল মাজেদও আগমী নির্বাচনের জন্য নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করবেনসেটি হয় সরাসরি, না হয় ঈঙ্গিতপূর্ণ ভাবে

সেদিন উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে তিনি অন্তত এক ঘন্টা কথা বললেন অবাক হওয়ার বিষয় ছিল, দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি একবারও নির্বাচন তো দূরে থাক, নিজের রাজনীতি করা নিয়ে একটি শব্দও বলেননি
দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতায় মালয়েশিয়ার একজন অসৎ পুলিশ অফিসারের দেশপ্রেমের গল্প শোনান মালয়েশিয়ার একজন পুলিশ অফিসার ছোট ছোট বিষয়ে কিছুটা অসৎ লোভী হলেও দেশের বড় স্বার্থে তিনি দেশপ্রেমে অবিচল ছিলেন মালয়েশিয়ার ওই অফিসারের গল্পের মধ্যে দিয়ে তিনি দেশপ্রেমের গুরুত্ব বুঝান বক্তব্যে তিনি আরও অনেক ঘটনার উল্লেখ করে দেশ গঠনে প্রত্যেক মানুষ নিজের ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশাবাদী গল্প শোনান

মনোমুগ্ধকর তাঁর বক্তব্যে ছিল, কিভাবে সবাই মিলে ঈশ্বরগঞ্জ ঈশ্বরগঞ্জের মানুষের কল্যাণে কাজ করা যায় বলতে গেলে তিনি ঈশ্বরগঞ্জের উন্নয়নের একটি রূপরেখা তুলে ধরেন কিন্তু তিনি একবারও বলেননি যে, উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে তাঁকে এমপি নির্বাচিত করতে হবে তাঁর বক্তব্য ছিল উন্নয়নের জন্য যার যার অবস্থান থেকে সবার ভুমিকা রাখতে হবে

লুৎফুল্লাহেল মাজেদের সঙ্গে আমার পরিচয় ২০১৬ তে হবে সম্ভবত ঈশ্বরগঞ্জ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রথম পরিচয়ের পর থেকে অনেকের মত আমার মনেও বড় একটা প্রশ্ন জাগে লোকটা কেন বাংলাদেশের প্রথাগত রাজনীতি করেন তাঁর জ্ঞান-প্রজ্ঞা তো এদেশের প্রথাগত রাজনীতির সঙ্গে মানায় না তাঁর সুশিক্ষা আর মানুষের সঙ্গে মার্জিত আচরণে তিনি একেবারেই রাজনীতি অঙ্গনে ভিন্ন এক নাম
পরিচয়ের পর থেকেই লুৎফুল্লাহেল মাজেদের সঙ্গে আমার হঠাৎ হঠাৎ মেসেঞ্জারে কথা হত তাঁর সব কথাই ছিল ঈশ্বরগঞ্জের মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি করা নিয়ে তিনি কথা বলতেন কিভাবে ঈশ্বরগঞ্জের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের উন্নতি করা যায় এটাই ছিল তাঁর কথার প্রধান বিষয় আমার মনে হতো রাজনৈতিক অঙ্গনে লুৎফুল্লাহেল মাজেদ একেবাইরেই ভিন্ন একজন তাঁর সকল চিন্তায় থাকে ঈশ্বরগঞ্জের মানুষের মঙ্গল এবং তা একেবারে নিঃস্বার্থ ভাবে রাজনীতি থেকে তাঁর পাওয়ার কিছু নেই বরং তাঁকে পেয়ে রাজনীতিই ধন্য হতে পারে

এবার একটা গল্প বলি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর গ্রামের ছোট একটা মেয়ে জন্মের পর থেকেই কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত মেয়েটার বাবা দরিদ্র মানুষ নিয়মিত ভাবে চিকিৎসা করানোর মত টাকা নেই সাংবাদিকতা পেশায় থাকার কারনে একদিন মেয়েটার বাবা আমার কাছে আসেএসে মেয়ের চিকিৎসার টাকা যোগাড়ের সংগ্রামর গল্প আমাকে শোনায় একদিন ঢাকায় গিয়ে এমপি হোস্টেলের দেয়ালে মেয়ের চিকিৎসার টাকা চেয়ে লিফলেট সাঁটাতে গিয়ে লোকটা নিরাপত্তা কর্মীর হাতে আটক হন লোকটাকে কিভাবে সাহায্য করা যায়, এমন ভাবতে ভাবতে মাথায় আসে লুৎফুল্লাহেল মাজেদের নাম আমি সরাসরি যোগাযোগ না করে ছাত্রদলের একজন নেতার মাধ্যমে অসুস্থ মেয়েটার বাবাকে পাঠাই লুৎফুল্লাহেল মাজেদের কাছেপরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তিনি দুই দফায় মেয়েটার বাবাকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেন
অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতার এটা খুব ছোট একটা নজির মাত্র তিনি ঈশ্বরগঞ্জের কত মানুষকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছেন সেটির সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই চিকিৎসার ব্যায় ছাড়াও ঈশ্বরগঞ্জের মানুষের নানা ধরণের দুঃসময়ে তিনি পাশে দাঁড়ান সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তিনি উদার ভাবে দান করেন বিষয়ে বেশি বলাটা বোধ হয় লুৎফুল্লাহেল মাজেদকে লজ্জা দেওয়াই হবে

লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বিএনপির ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী হিসাবে তিনি যথেষ্ট টাকার মালিক বলে মনে হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে টাকার মালিকদের অন্য রকম কদর থাকে সব রাজনৈতিক দল তাঁদের দলে নিতে চায় কিন্তু লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বিএনপির রাজনৈতিক আর্দশের ধারক তিনি মনে-প্রানে বিএনপিকে ভালোবাসেন

জাতীয়তাবাদী আর্দশের নেতা নিজের উপজেলার কর্মীদের জন্য আদর্শ একজন অভিভাবক নেতা-কর্মীদের জন্য তিনি একজন সৎ পরামর্শদাতা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের ক্ষমতা সময় তিনি বিএনপির অসহায় কর্মীদের পাশে ছিলেন ছায়ার মত দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ দুঃশাসনে হয়েছেন নির্যাতিত হয়েছেন কারারুদ্ধ কারারুদ্ধ কর্মীদের মামলা ব্যায় মেটানো থেকে শুরু করে অনেকের পরিবারের জন্য তিনি ছিলেন সহায়ক ১৬ বছরে লুৎফুল্লাহেল মাজেদ নিজেও হয়েছেন হয়রানির শিকার তবু হাল ছাড়েননি তিনি
জুলাই আন্দোলনের সময় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের হাতে তিনি আটক হন আটক করার পর তাঁকে আয়নাঘরে রেখে চালানো হয় নির্যাতনওই নির্যাতনের তাঁর জীবন সংশয়ে পড়ে তবু তিনি দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি সামান্যতম
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি যেমন ঈশ্বরগঞ্জের মানুষকে দিয়েছেন, তেমনি পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসাঈশ্বরগঞ্জের মানুষের কাছে তিনি এখন সবচেয়ে আস্থাভাজন নেতা কারন ঈশ্বরগঞ্জবাসী জেনেছে, লুৎফুল্লাহেল মাজেদ শুধু দিতে জানেন কোন কিছু নিতে হয় না তাঁর রাজনীতি থেকেও তাঁর নেওয়ার কিছু নেই, মানুষের ভালোবাসা ছাড়া

-----Ad1----