রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫ ||

মুক্তদিন
হোম / খবর

ময়মনসিংহের নান্দাইল

পাওনা টাকা আদায়ের নামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে যা হলো

প্রকাশ:

রবিবার, মার্চ ৯, ২০২৫ || ০৮:৩০

168

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক

পাওনা টাকা আদায়ের নামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে যা হলো

ছবিঃ মুক্তদিন


ময়মনসিংহের নান্দাইলে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুল শিক্ষককে ধরে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।পাশপাশি দেশিয় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁর কাছ থেকে কয়েকটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায় করেছে একটি চক্রের সদস্যরা।

এদিকে আটক অবস্থায় থাকার পর চক্রের কয়েকজন সদস্য শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ও গোয়াল ঘর থেকে পৌনে আনুমানিক দুই লাখ টাকা মূল্যের একটি ষাঁড় নিয়ে যায়। টাকা ও ষাঁড় নিয়ে যাওয়ার শিক্ষককে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর হতাশ ও হতবাক শিক্ষক গত তিনদিন ভীতিকর অবস্থায় থাকার পর আজ রোববার বিকালে নান্দাইল মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

এ ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের তালজাঙ্গা গ্রামে। ঘটনার শিকার শিক্ষকের নাম মো. ইসলাম উদ্দিন মাস্টার (৬৫)।

স্থানীয় সুত্র, থানায় জমা দেওয়া এজাহার ও শিক্ষক ইসলাম উদ্দিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাঁর ভাগ্নি জামাই মো. রফিক মিয়া রেলওয়েতে চাকরি করেন। 

সেই সুবাদে মেয়ে জামাই পলাশ আকন্দকে রেলওয়ের গেইটম্যান পদে চাকরি যোগাড় করে দেওয়ার জন্য তিনি গত চার বছর আগে ভাগ্নি জামাইকে রফিক মিয়াকে পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।  

অন্যদিকে তাঁর পাশের বাঁশহাটি গ্রামের বাসিন্দা মজনু মিয়ার পুত্র মো. জাকির হোসেনও চাকরির জন্য তাঁর ভাগ্নি জামাইকে তিন লাখ টাকা দেন। শিক্ষক ইসলাম উদ্দিন দাবি করেন, জাকির হোসেনেরে লেনদেনের কথা তিনি অনেক পরে জেনেছেন।

কিন্তু দুজনের কারোর চাকরি হয়নি। চাকরি দিতে না পারায় তিনি(শিক্ষক ইসলাম উদ্দিন) তাঁর ভাগ্নি জামাইয়ের কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তাগাদা করে আসছিলেন। কিন্তু গত চার বছরেও সেই টাকা ভাগ্নি জামাইয়ের কাছ থেকে ফেরত পাননি।

এদিকে টাকা দিয়ে চাকরি না মেলায় ক্ষুদ্ধ হন জাকির হোসেন। তিনিও টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তাঁর (শিক্ষকের) ভাগ্নি জামাইকে তাগাদা দিয়ে আসছিলেন। তবে তিনিও টাকা ফেরত পাননি।

গত তিন মাস আগে জাকির হোসেন শিক্ষক ইসলাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রামে এক সালিস ডাকেন। ওই সালিসে জাকির হোসেনের পক্ষের কিছু লোক সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, জাকিরের তিন লাখ টাকা শিক্ষক ইসলাম উদ্দিনের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষক ইসলাম উদ্দিন ওই সাক্ষ্য মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে সালিসে সিদ্ধান্ত হয় তিন লাখ টাকা শিক্ষক ইসলাম উদ্দিনকে পরিশোধ করতে হবে।

ইসলাম উদ্দিন মুক্তদিনকে বলেন, গ্রামে তাঁর তেমন লোকবল নেই। তাই জাকির হোসেনের আয়োজন করা সালিস থেকে তাঁর ওপর অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপানো হয়েছে। চাপের মুখে তিনি বাধ্য হয়ে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। এজন্যে তিনি তিন মাস সময় চেয়ে নেন। সালিসে তিনি শর্ত দেন তিন লাখ টাকা যোগাড় করে নির্ধারিত তারিখে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে রাখবেন। জাকির হোসেনকে ওই মসজিদ থেকে টাকাটা তুলে আনতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফসলি জমিতে কাজ করছিলেন শিক্ষক ইসলাম উদ্দিন। এ সময় জাকিরের নেতৃত্বে ৫-৬ জনের একটি দল শিক্ষককে ধরে বাঁশহাটি গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাঁকে একটি দালানঘরে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শিক্ষকের কাছ থেকে ছয়টি নন জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

অন্যদিকে চক্রের কয়েকজন সদস্য আটক থাকা শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ও গোয়াল ঘর থেকে একটি ষাঁড় নিয়ে যায়।

স্থানীয় একটি সূত্রে জানায়, গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার শিক্ষকের গোয়াল থেকে আনা ষাঁড়টি বাঁশহাটি গ্রামের মো. খায়রুল ইসলাম ভূঁইয়ার গোয়ালে ছিল। কিন্তু ঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়লে গরুটি সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে খায়রুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, জাকির হোসেন তাঁর পরিচিত। তিনি তালজাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মো. ইসলাম উদ্দিনের কাছে টাকা পান। একটি সালিসে সিদ্ধান্ত হয় টাকা ফেরত দেওয়ার। কিন্তু ওই শিক্ষক টাকা ফেরত দেননি। পরে শিক্ষকের গরু নিয়ে কী হয়েছে তা তিনি বলতে পারবেন না।

ওই সালিসে উপস্থিত বিএনপি নেতা মো. আবদুল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষক টাকা ফেরত দেবেন বলে সালিসে জানিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা ফেরত না দেওয়ায় পরে কী হয়েছে তা তিনি বলতে পারবেন না।

নান্দাইল মডেল থানায় দেওয়া অভিযোগটি তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুদস সালাম। তিনি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঁশহাটি গ্রামে গিয়েছিলেন।শিক্ষকের গোয়ালঘর থেকে গরু নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে এখনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলমান রয়েছে।

-----Ad1----